রাজধানীর মহাখালী ফাইওভারে নোয়াখালীর এমপি একরামুল করীম চৌধুরীর স্ত্রীর গাড়িচাপায় সেলিম ব্যাপারী (৫৫) নামে এক পথচারী নিহত হয়েছেন। মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টায় বেপরোয়া গতির গাড়িটি সেলিম ব্যাপারীকে চাপা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। গাড়িটি এমপি-পুত্র শাবাব নিজেই চালাচ্ছিলেন বলে পুলিশকে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। তবে পরিবারের পক্ষ থেকে বিষয়টি অস্বীকার করা হয়েছে।
নিহত সেলিম ব্যাপারী মহাখালীতে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের গাড়িচালক ছিলেন। কাজ শেষে বাসায় যাওয়ার পথে তিনি দুর্ঘটনায় নিহত হন। তাকে ধাক্কা দেয়া গাড়িটি নোয়াখালী সদরের আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য একরামুল করীম চৌধুরীর স্ত্রী কামরুন্নাহার শিউলীর বলে পুলিশ জানায়। শিউলী নোয়াখালীর কবিরহাট উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান। গাড়িটি তার বলে তিনি পুলিশের কাছে স্বীকার করেছেন। তবে গাড়িটি তার ছেলে চালাচ্ছিল না বলে তিনি দাবি করেছেন।
মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টায় মহাখালী ফাইওভারের ওপরে দ্রুতগামী একটি প্রাইভেট কার সেলিমকে চাপা দিয়ে চলে যায়। এ সময় পেছনে থাকা একটি মোটরসাইকেল ও একটি প্রাইভেট কার গাড়িটিকে অনুসরণ করে। গাড়িটি গিয়ে সংসদ ভবনের উল্টো দিকে ন্যাম ফ্যাটে যায়। সেখানে দায়িত্বরত আনসার ও নিরাপত্তা প্রহরীরা বলেছেন, গাড়িটি থেকে তারা শাবাবকে নামতে দেখেছেন। শাবাব একরাম চৌধুরীর একমাত্র ছেলে।
এক রিপোর্টে ওই ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী শামীম আশরাফীর বরাত দিয়ে বলা হয়েছে দুর্ঘটনাটি যখন ঘটে তখন ওই প্রাইভেট কারটির পেছনে ছিলেন একজন মোটরসাইকেল আরোহী। দ্রুত পালাতে সচেষ্ট গাড়িটিকে ওই মোটরসাইকেল আরোহী অনুসরণ করা শুরু করেন এবং চিৎকার করে আশপাশের সবার সহযোগিতা চান। এ সময় কয়েকজন বন্ধুসহ শামীম আশরাফীও প্রাইভেট কারে ওই সড়ক দিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনিও গাড়িটিকে অনুসরণ করে দেখতে পান গাড়িটি সংসদ ভবনের উল্টো দিকে ন্যাম ভবনের দিকে ঢোকে।
ওই প্রত্যক্ষদর্শী জানান, ন্যাম ভবনের ভেতরে ঘাতক গাড়িটি থেকে এক তরুণ নেমে বলে, ‘এটা আমার এলাকা, কে কে আসবি আস।’ এ সময় ওই তরুণের সাথে কথা কাটাকাটি হয়। তখন আশপাশের লোকজন ছুটে আসে এবং তরুণটিকে শাবাব নাম ধরে ডাকতে থাকে। এ সময় এসব লোকজন ও দায়িত্বরত আনসার ও কেয়ারটেকাররা জানান, শাবাব এমপি একরাম চৌধুরীর ছেলে। এরপর তাদের ন্যাম ভবন থেকে বের করে দেয়া হয়। শামীম জানান, মোটরসাইকেল আরোহী ঘটনার সাথে সাথে ঘাতক গাড়ি ও চালকের ছবি তোলেন এবং ভিডিও করেন। কিন্তু তাকে হুমকি দিয়ে সেসব ছবি ও ভিডিও মুছে ফেলতে বাধ্য করা হয়। তিনি বলেন, এর প্রমাণ ন্যাম ভবনের সিসি ক্যামেরায় নিশ্চয় ধারণ করা হয়েছে। ওই সিসি ক্যামেরা ফুটেজ দেখলেই এ ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যাবে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেছেন, ওই গাড়িতে সংসদ সদস্যের স্টিকার ছিল। কাফরুল থানার ওসি শিকদার মোহাম্মদ শামীম হোসেন জানান, রাতে ঢাকা মেট্রো ১৩-৭৩৫৫ নম্বরের প্রাইভেট কারটি সেলিমকে ফাইওভারের ওপর ধাক্কা দেয়। ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। গাড়িটি নোয়াখালীর একজন সংসদ সদস্যের ছেলে চালাচ্ছিলেন। ঘটনার পর পুলিশ লাশ উদ্ধার করে কাফরুল থানায় নিয়ে যায়। তবে গাড়িচালক ও গাড়ি আটক রাখা হয়নি। এই ঘটনায় পুলিশ একটি সড়ক দুর্ঘটনার মামলা করেছে।
সূত্র: নয়া দিগন্ত